Folk dance forms of India // ভারতের লোকনৃত্য

 Folk dance forms of India  // ভারতের  লোকনৃত্য

         প্রতিটি রাজ্যের তার নিজস্ব লোকনৃত্য আছে যেমন কর্ণাটকের বেদারা ভেশা, দল্লু কুনিঠা নাচ, কেরলের থিরায়াত্তম এবং থাইয়াম নাচ, গুজরাটের গার্বা,গাগারী,গোধাখূন্ড,এবং ডান্ডিয়া নাচ, রাজস্থানের কালবেলিয়া,ঘুমর,এবং রাসিয়া নাচ, জম্মু ও কাশ্মীরের নেইয়োপা,এবং বাচা নাগমা নাচ, পাঞ্জাবের ভাংরা ও গিদ্ধা নাচ, উত্তরাখণ্ডের ছুলিয়া নাচ, 



তাদের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে :

1) ঝুমুর- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নৃত্য, এছাড়াও ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, আসাম ও ওড়িশা রাজ্যে এই ধরনের নৃত্য আছে।



এক দিকে মাদল বাজছে আরেক দিকে গান গেয়ে বিশেষ ছন্দে একটি দল নাচছে। কখনও দ্রুত লয়ে বা  কখনও ধীর লয়ে।

আবার একটি বেদীকে কেন্দ্র করে দলটি তালে তালে ঘুরছে। এমন অদ্ভুত মনোমুগ্ধকর নাচের নাম ঝুমুর নাচ। মূলত ঝুমুর গান প্রাচীন ধারার লোকসঙ্গীত। অনেক কাল আগে বিশেষ করে সাঁওতালদের মাঝে এটির প্রচলন ছিল। প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন জনপদেও এ নাচের কথা উল্লেখ রয়েছে। সাহিত্যরত্ন হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের মতে ঝুমুরের সঙ্গে কীর্তন মিশে পরবর্তীকালে যাত্রার উদ্ভব ঘটেছে।

চা বাগানে বসবাসরত চা শ্রমিকেরা প্রায় দেড়শ’ বছর আগে ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এদেশে আসে। তখনই সাথে করে ঝুমুর নাচের অনন্য সংস্কৃতি নিয়ে আসে তারা। চা শ্রমিকদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল নাচ। এরমধ্যে ঝুমুর নাচ, সাঁওতাল নাচ ও লাঠি নাচ অন্যতম। এসব নাচ কোন বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয় না। সাধারণত এসব নাচ বিভিন্ন পূজাকে উপলক্ষ্য করে হয়ে থাকে। ঝুমুর নাচও হয় করম পূজাকে উপলক্ষ্য করে। চা বাগানে বসবাসরত শ্রমিকেরা সম্পদ রক্ষার জন্য উপাসনার উদ্দেশ্যে এই পূজা করে থাকে। ঝুমুর নাচ ও গান একই সাথে হয়। নিজস্ব সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে ভাদ্র মাসের একাদশীর সাত দিন আগে থেকে ঝুমুর নাচ ও গানের মহড়া শুরু হয়। বংশ পরম্পরায় এই সংস্কৃতির তারা লালন ও চর্চা করে আসছে।

ঝুমুর নাচ প্রকৃত পক্ষে প্রার্থনা নির্ভর। সৃষ্টিকর্তার করুণা লাভই এর প্রধান লক্ষ্য। নাচ, গান ও বাদ্য সহযোগে ঝুমুর গাওয়া হলেও এতে গানের প্রাধান্য থাকে।   বাদ্যযন্ত্রের মাঝে মাদল, ঢোল ও করতাল ব্যাবহার করা হয়। গানের সুর উচু থেকে নিচে অবরোহণ করা হয়, যা ঝুমুরের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তালকে অগ্রাহ্য করে মাত্রা অনুসরণ করে সুর দেওয়া হয়। সম থেকে শুরু না করে ফাঁক থেকে গান শুরু করা হয়। ঝুমুর গানের কথা গুলো ভিন্ন হলেও সুরের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় না। ঝুমুর গানের কথা গুলো বাস্তবধর্মী এবং আসামীয় ভাষার প্রভাবযুক্ত। চা শ্রমিকদের দৈনন্দিন সুখ দুঃখ নিয়েই গান গুলো রচনা হয়। তবে মজার ব্যাপার হল এই গান গুলো কোথাও লিখে রাখা হয় না। মুখে মুখেই গানগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। ঝুমুর নাচ দলগত ভাবে পরিবেশন করা হয়। চা বাগানের নারী ও পুরুষেরা একত্রে শৃঙ্খলিত ভাবে পরিবেশন করে। এ সময় একটি পবিত্র বেদীকে কেন্দ্র করে নাচের দল বৃত্তাকারে নেচে গেয়ে ঘুরে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল এই নাচ কাউকে হাতে ধরে শেখাতে হয় না বরং বংশগত ভাবেই এই নাচ চা শ্রমিকেরা ধারন করে। অপূর্ব সুরলহরী সহকারে সমবেত ছন্দে শৃঙ্খলিত নৃত্যের ঝুমুর নাচ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে পারে।     

ঝুমুর নাচ সাধারণত বাড়ির আঙিনায় সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। ভাদ্র মাসের একাদশীতে প্রায় সকল চা বাগানেই ঘটা করে ঝুমুর নাচের আয়োজন হয়। কর্মব্যস্ত দিনের শেষে চা শ্রমিকেরা এই নাচ দেখতে ভিড় জমায়। চা শ্রমিকদের শ্রমনির্ভর সাদাকালো জীবনে কিঞ্চিৎ বিনোদনের খোরাক যোগায় ঝুমুর নাচ।

এতো গেল শুধু ঝুমুর নাচের কথা। এ রকম আরও অনেক সংস্কৃতি চা শ্রমিকেরা যুগের পর যুগ বংশ পরম্পরায় লালন করছে। উচ্চশ্রমে নিম্ন মজুরি পেলেও আদিপুরুষের এসব সংস্কৃতি চা শ্রমিকেরা নীরবে নিভৃতে যুগের পর যুগ চর্চা করছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে চা বাগান গুলোতে প্রায় ৯৮টি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস। যার মাঝে হাতে গোণা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশই সরকারি গেজেটের বাইরে। এই সকল জনগোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রনে চা বাগানগুলো সমৃদ্ধ।

অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর পৃথক ভাষা, রীতিনীতি, কৃষ্টি, সংস্কৃতি সব রয়েছে। অনেক ভাষার লিখিত রূপ রয়েছে। কতগুলো ভাষার লিখিত রূপ আগেই হারিয়ে গেছে। আর অনেক ভাষা যথাযথ সংরক্ষনের অভাবে হারিয়ে যাবার পথে। চা বাগান গুলোতে সার্বজনীন যোগাযোগের জন্য বর্তমানে আসামীয়-বাংলা-নাগরি সংমিশ্রণে যে ভাষা প্রচলিত আছে সেটাকে স্থানীয়ভাবে বাগানী ভাষা বা জংলী ভাষা বলা হয়। এ ভাষার কোন লিখিত রূপ নেই। চা বাগানে শিক্ষায় এত পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ভাষাগত দুর্বলতা।

নিজস্ব মাতৃভাষা ব্যতিরেকে বাংলা ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ তাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। ফলে মূলধারার সাথে তারা প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না।


 2) কুচিপুড়ি- অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের নৃত্য।



কুচিপুড়ি নৃত্যের উৎপত্তি:

অন্ধপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার ছোট গ্রাম কুচিলা পুরে এই কুচিপুড়ি নৃত্যের উৎপত্তি হয়। নৃত্যের এই ধরনটি উদ্ভাবন করেন তীর্থ নারায়ণ ও সিদ্দেন্দ্র যোগী।

কুচিপুড়ি নৃত্যের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রাণোচ্ছ্বলতার  ওপর গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া নাট্যশাস্ত্রের নীতি অনুসরণ করেই এই নৃত্য।

  • কুচিপুড়ি মূলত হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের বৈষ্ণব রীতি হিসেবে বিকাশ লাভ করে এবং এটি তামিল নাড়ুতে প্রাপ্ত ভগবত মেলার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
  • কুচিপুড়ি নৃত্যের পোশাক:
    নৃত্যে পুরুষেরা মহিলাদের পোশাক পরেন। পোশাক ও নৃত্যকৌশলে ভারতনাট্যমের সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। এই শাস্ত্রীয় নৃত্য প্রদর্শনে নিত্ত নৃত্য ও নাট্য এই তিনটি শ্রেণী রয়েছে।
  • কুচিপুড়ি নৃত্যের প্রতিথযশা শিল্পী:
    রাজা রেড্ডি ও রাধা রেড্ডি, কৌশলা রেড্ডি ,যামিনী রেড্ডি, ভেদান্তম সত্য নারায়ন শর্মা, চাইনা সত‍্যম, নির্মলা বিশ্বেশরা রাও, জুনিয়র এন টি রামা রাও, শান্তা রাও, শোভা নাইডু, জি সরলা, বালা সরস্বতী, রাজারাম রাও প্রমূখ।

 3) বিহু, বাগুরুম্বা- আসাম রাজ্যের নৃত্য।


বিহু পুরুষ-মহিলা উভয়ে মিলিত হয়ে করা এক সমবেত লোকনৃত্য। পারম্পরিক বিহুগীত এবং বিভিন্ন লোকবাদ্যের সমাহার হওয়া এই নৃত্য প্রদর্শনে ঢুলীয়ার ঢোল-এর সঙ্গে মুগার মেখেলা চাদর পরে টাকুরি ঘুরিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচা নাচনীদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র বলা যায়। নাচনীদের নৃত্যমুদ্রাও পুরুষ নৃত্যশিল্পীদের থেকে বেশি।

 4) ভাঙ্গরা- পাঞ্জাব রাজ্যের নৃত্য।


 ভাঙ্গরা পাঞ্জাবের এক প্রকার ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য, যা পাঞ্জাবের শিয়ালকোট এলাকায় উদ্ভূত হয়েছে। এটি ফসল তোলার মৌসুমে করা হয়। ম্যানুয়াল অনুসারে, ভাংড়া বিশেষ করে স্থানীয় বৈশাখী উৎসবের সাথে যুক্ত।


Comments

Popular posts from this blog

Drama and Art Education // নাটক এবং শিল্পশিক্ষা

Practicum Paper: Calendar Chart on Various Musical Instruments

Practicum Paper on "Developing a Creative Book Cover Design"