Madhubani Painting (মধুবনী চিত্রকলা)

 Madhubani Painting (মধুবনী চিত্রকলা)

প্রায় আড়াই হাজার বছর পুরোনো মধুবনী চিত্রকলা,বর্তমান নেপালে ও বিহারের উত্তর সীমানপ্রান্ত জুড়ে অবস্থিত ছিল মহাকাব্যের রাজা জনকের মিথিলা রাজ্য।মিথিলার একটি গ্রাম মধুবনে এক বিশেষ ধরনের চিত্রকলা গড়ে উঠেছিল,সেই গ্রামের নাম অনুসারে এই চিত্রকলাটির নাম দেওয়া হয় "মধুবনী চিত্রকলা"।সেখানকার মহিলারা গ্রামের বাড়ির দেয়ালে বিশেষ উৎসব-বিয়ে,নতুন শিশুর জন্ম,উপনয়ন উপলক্ষে ছবি আঁকেন।বিয়ে উপলক্ষে আঁকা চিত্রগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।কথিত আছে,মহারাজা জনক তাঁর প্রিয়তমা কন্যা সীতার বিয়ের আগে,রাজ্যবাসীদের আদেশ দিয়েছিলেন,বিয়ে উপলক্ষে গোটা রাজ্য যেন চিত্রে সুসজিত করা হয়।সেই থেকে মধুবনী চিত্রকলার জন্ম, এই চিত্রকলাকে আবার "মিথিলা চিত্রকলা" ও বলা হয়।
মধুবনী চিত্রগুলিতে বেশিরভাগ প্রাচীন গল্প থেকে প্রকৃতির দৃশ্য এবং দেবদেবীদের সাথে তাদের সংযুক্তির চিত্র আঁকা হয়।যেমন-রাম-সীতা,রাধা-কৃষ্ণ,চন্দ্র,সূর্য,বাঁশগাছ,মাছ,পাখি প্রভৃতি মোটিফ এক হয়।মধুবনী চিত্রকলা সম্পূর্ণরূপে গ্রামীন ও লোকশিল্প।তাঁরা মধুবনী চিত্রকলার জন্য বিভিন্ন ধরনের জিনিস থেকে রং তৈরি করত যেমন-নীল গাছ থেকে নীল রং,চালের গুঁড়ো থেকে সাদা রং,ভুষোকালি থেকে কালো রং,শিমপাতা থেকে সবুজ রং,হলুদ থেকে হলুদ রং তৈরি করা হত।সাধারণত এই চিত্রকলা পাঁচটি ধরন দেখতে পাওয়া যায়-ভরনি, কাচনি,তান্ত্রিক,নেপালি,গোবর।মধুবনী চিত্রকলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল ডবল কন্ট্যুর রেখা।এই ডবল কন্ট্যুর রেখা মধুবনী চিত্রকলা ছাড়া আর অন্য কোনো চিত্রকলায় দেখা যায় না।এই চিত্রকলায় খালি জায়গাগুলি ফুল,প্রাণী,পাখি এমনকি জ্যামিতিক ডিজাইনের চিত্র দিয়ে ভরাট করা হয়।



১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগে মধুবনী চিত্রকলা বাইরের জগতের সাথে অপরিচিত ছিল।১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত- নেপাল সীমান্তে একটি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের ফলে এই অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।সেই সময় মধুবন জেলার ব্রিটিশ কলোনিয়ান অফিসার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন উইলিয়াম আর্চার।তিনি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাটি দেখতে এসে মধুবনী চিত্রকলার খোঁজ পেয়েছিলেন এবং এই দেয়াল চিত্রগুলি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন,আর সেগুলোর অনেক ছবি তুলেছিলেন।১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মধুবনী চিত্রকলা সম্বন্ধে মার্গ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লেখেন এবং সেটি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছিলেন।তখন ভারতীয় হ্যান্ডিক্রাফ্ট বোর্ডের অধিকর্তা পুপুল জয়কার মুম্বাইয়ের একজন শিল্পী শ্রী ভাস্কর কুলকার্নিকে মিথিলায় পাঠিয়েছিলেন,যাতে মধুবনের মহিলারা দেয়ালে যে ছবি আঁকতেন তা কাগজে এঁকে বিক্রি করতে পারে।এইভাবে পুপুল জয়কারের উপস্থাপনায় মধুবনে মধুবনী চিত্রকলার এক নতুন সূচনা হয়।মধুবনী চিত্রগুলি নতুনভাবে প্লাস্টার করা মাটির দেয়াল এবং ঝুপরিগুলির মেঝেতে করা হয়েছিল,কিন্তু এখন এই চিত্রগুলি কাপড়,হাতে তৈরি কাগজ এবং ক্যানভাসেও করা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

Drama and Art Education // নাটক এবং শিল্পশিক্ষা

শিল্পের উপাদান

Practicum Paper: Calendar Chart on Various Musical Instruments